
ডাচ ডিজিজ – যে যুদ্ধে বিপদে পড়তে চলেছে বাংলাদেশ! আমরা কি প্রস্তুত?
২০১২ সালের সময় তা চিন্তা করি, মনে করুন একটি দেশ, জিডিপি – ৫.৬৩%, দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যা মাত্র ২০%, প্রধান সম্পদ – ব্লাক ডায়মন্ড ক্রুড অয়েল। সৌদি আরবের পর বিশ্বে সবচেয়ে তেল মজুদকারক দেশ। যাদের সবচেয়ে বন্ধু রাষ্ট্র, চীন।
এত শক্তিশালী অর্থনীতি, যারা কিনা সম্ভাব্য ট্রেডওয়ার এ চায়নার জন্য এক শক্তিশালী সম্পদ । এত তেল থাকার পরেও যুক্তরাষ্ট্র একে ঘাটাঘাটি পর্যন্ত করতে চায় না। দেশটির নাম – ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে দেশটির অর্থনীতি ভেংগে চৌচির। কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা যুদ্ধ ছাড়াই দেশটিতে এখন বিশাল পরিমাণ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি, মুদ্রাস্ফীতি ৮০০০০% অতিক্রম করেছে এবং ধারনা করা হচ্ছে ২০১৯ এ তা ১০০০০০% এ অতিক্রম করবে। যার পরবর্তী ধাপটির নাম -ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ!!
এই সংকটের প্রধান কারন বলা হচ্ছে দুইটি:
ক ) সেন্ট্রাল ব্যাংকের অর্থের হিসাবে প্রতিনিয়ত গরমিল।
খ ) ডাচ ডিজিস
ডাচ ডিজিস রোগটা একটা দেশের জন্য বেশ ভয়ংকর। এই রোগের লক্ষণ সাধারণত তিনটি:
১) দেশের এক্সপোর্ট ক্যাশ ফ্লো এর ৮০% (মেজরিটি ) আসবে কোনো একটা নির্দিষ্ট সেক্টর থেকে।
২) জিডিপি বাড়তে থাকবে খুবই দ্রুত৷ মানুষ তার জীবনযাত্রার মান বাড়াবে। শ্রমিক তার বেতন বাড়াবে আরো সুখে থাকার আশায়। তাদের জীবনযাত্রার সাথে তালমেলাতে ইম্পোর্ট ওরিয়েন্টেড ইকোনমি ব্যবস্থা গড়ে উঠতে থাকে।
৩) সম্পদের বিষম বন্টন। সমাজের একটা অংশ বিশাল পরিমান সম্পদ নিয়ে বসে থাকবে, আর বাকি মানুষের অংশের সম্পদ শুষে যেতে থাকবে।
এই সুখের সংসার ততদিনই টিকে থাকবে, যতদিন ” একটি নির্দিষ্ট সেক্টর” দেশকে ৮০% ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট দিতে থাকবে ।
ভেনিজুয়েলার ৮০% আসতো তাদের তেল থেকে। ২০১৪ সালে “আরব বসন্ত” এর প্রভাবে হঠাৎ পৃথিবীতে তেলের দাম কমে যায় আর সাথে সাথেই থপ করে ভেংগে পড়ে পরে তাদের এত দিনের শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি।
এবার আসা যাক বাংলাদেশে। বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ রেট এখনো ৭.৮%। দেশের রপ্তানি আয় ৮০% এর মতো হয়ে থাকে (আর এম জি ) রেডি মেট গার্মেন্টস সেক্টর থেকে
-আমাদের জিডিপি গ্রোথ রাতে অগ্গ্রেসিভলিহাই।
– সমাজের ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। ব্যাংক থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। ইনভেস্ট হচ্ছে বাইরের দেশে।
সুতরাং আমরা কি তৈরী ডাচ ডিজিস এর জন্য ?তার জন্য আমাদের দেখে তৈরী হতে হবে.
এখন দেখি আমরা কিভাবে তৈরী হতে পারি :
চায়না এখন আর লো কস্টিং এ বাংলাদেশের সাথে পেরে উঠছে না। এমনকি AI ( artificial intelligence) এর ব্যবহার দিয়েও এই কস্টিং এ পেরে উঠা সম্ভব হচ্ছে না। এই বছরে নির্বাচনী বছর হবার পরেওআর আমি জি সেক্টরে এ রেকর্ড পরিমান অর্ডার আসছে। যেহেতু চীন আস্তে আস্তে এই গার্মেন্টসের কাজ ছেড়ে দিচ্ছে। বছরের পর বছরে এই কাজের পরিমাণ আরো বাড়বে। জিডিপি গ্রোথ রেট আরো বেড়ে যাবে। মানুষের লাইফস্টাইল আরো উন্নত হবে। তাহলে আমাদের আর আমি জি সেক্টর ভবিষ্যত পুরোপুরি সুরক্ষিত?? না। গার্মেন্টস সেক্টরটা অনেকটা বেদুইনদের মত। একদেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরতে থাকে। এই সেক্টরের বেঁচে থাকা নির্ভর করে ২ টি জিনিসের উপর।
১) স্বল্প খরচে উৎপাদন
২)স্বল্প খরচে শিপমেন্ট
-চীন আফ্রিকার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলাকে দখল করে নিচ্ছে৷ এই বছরেও ৩০ বিলিয়ন ইউএসডি লোন দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র আফ্রিকার দেশগুলার সবকিছু ঠিকঠাক করার জন্য। অনেকটা শাসিয়ে বলা ‘টাকা দিচ্ছি দেশ ঠিকঠাক কর। তোদের দেশটা আমাদের দরকার। কাজ নিয়ে, লোন নিয়ে নো টেনশন। ’দরিদ্র দেশ। এত টাকা আফ্রিকান নেতাদের হাতে পড়লে তো টাকা দিয়ে লেজ গুটিয়ে পালাবে। তাই চীন এই বিশাল টাকাটুকু দিচ্ছে নিজের দেশের নিজেস্ব বাসস্থান নির্মাণ কোম্পানি এবং কন্সট্রাকশন ফার্ম কে দিয়ে । চায়না আফ্রিকার দেশগুলাকে তাদের ফ্যাক্টরি বানানোর জন্য বেশ জোরেশোরেই মেরামত করে নিচ্ছে। বড় বড় ব্রীজ বসানো হচ্ছে, বিশাল বিশাল পাওয়ার হাউস বানানো হচ্ছে। টাকা দিচ্ছে চায়না, কাজ করছে চায়না, শুধু লোনটুকু ফিরিয়ে দেবে আফ্রিকা। চায়না জানে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো অবশ্যই তাদের লোনের টাকাটুকু ফিরিয়ে দিতে পারবে না। তাহলে বিনিময়ে কি নিতে চায় চায়না তাদের থেকে? খুব সহজ, তাদের সী পোর্ট এবং চিপ লেবার বা সস্তা শ্রম। বর্তমানে যে ঘটনাকে বলা হচ্ছে “চাইনিজ ডেপ্ট ট্রাপ ফর নেক্সট ট্রেড ওয়ার (ব্রিটিস কলোনী এর নতুন ভার্শন ) ।
এইসব তীরবর্তী অঞ্চলগুলা পুরোপুরিভাবে তৈরি করার পরপরই চীন যা করবে তা আমাদের জন্য ভয়ংকর দুঃসংবাদ।যেকোন ইন্ডাস্ট্রেইল রেভুলেশন এর এর প্রথম ধাপ ‘বস্ত্রশিল্প বিপ্লব ’। সুতরাং গার্মেন্টস সেক্টর চলে আসবে আবারো চীনের বলয়ে। (ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে, এবং আফ্রিকার ইথিওপিয়ার মত অনেকগুলা দেশ থেকে আমেরিকা কাজ আদায় করে নিচ্ছে) আফ্রিকার লেবার কস্ট আবশ্যই আমাদের চেয়ে কম। আফ্রিকা থেকে আমেরিকা,ইউরোপ বেশ কাছাকাছি সুতরাং কমে যাবে শিপিং কস্ট। কি দরকার তাদের এত দূর থেকে বেশি দাম দিয়ে জামাকাপড় কেনা??
হঠাৎ একদিন যদি গার্মেন্টস সেক্টর বাংলাদেশ থেকে সরে যায় এর বিকল্প ব্যবস্থা কি?? ভিয়েতনাম ইতিমধ্যে হেভি ইন্ডাস্ট্রি তে কনভার্ট হয়ে যাচ্ছে। ইন্ডিয়া আইটি সেক্টর এখন খুবই স্ট্রং জায়গায় চলে গেছে।এখন সুখে আছি বলে কি সবসময় সুখে থাকবো ? ভেনিজুয়েলা ২০১২ তে বেশ সুখে ছিল। তাদের এখন সুখ নাই। দেশের মানুষরা কোন যুদ্ধ বিদ্রোহ ছাড়াই দেশ ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে অন্য দেশে ঢুকে মার খাচ্ছে। তাও তারা দেশে ফিরে যাচ্ছে না। ভেনিজুয়েলা ‘আরব বসন্তের’ পরোক্ষ শিকার। ‘আরব বসন্তের’ প্রভাব আমাদের উপর এসে পড়ে নি।
সামনে আরেকটা যুদ্ধ ঘটতে যাচ্ছে। সামনের যুদ্ধের নাম ইউ এস – চীনা ট্রেড ওয়ার ’ (এই যুদ্ধ বন্দুকের না। ইউ এস এ আর চিনা এর মধ্যে ঘটতে থাকবে ব্যবসায়ীক যুদ্ধ। অনেকের মতে, ট্রেডওয়ার ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে)। এই অভিনব যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশে সারাসরি পড়বে।
আমরা কি এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকবো?? নাকি এখনো জিডিপি নামক মরীচিকার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তুলতে থাকবো ??- প্রশ্নটির উত্তরের উপর হয়তো একটা জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। সুতরাং আমাদের ফুড ও এফএম সি জি সেক্টর কে এগিয়ে আন্তে হবে এক্সপোর্ট মার্কেটে।
Leave a reply